
জামালপুর পৌর শহরের দাপুনিয়া এলাকায় গ্রাম্য সালিশিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না পেয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৭ পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগে উঠেছে।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়।
এই রকম অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা ঘটার একদিন পর শনিবারে জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার।
থানার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জামালপুর পৌর শহরে দাপুনিয়া এলাকার মো. মন্টু মিয়া (৪২) ও একই এলাকার আহাম্মদ আলীর ছেলে মো. মুনছুর মিয়ার (৪৫) বিদ্যুতের লাইন নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর উভয়পক্ষের মধ্যে আবারও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দাপুনিয়া পশ্চিমপাড়া বকুলতলা মোড়ে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে। সালিশে বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুর মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ৫০ হাজার টাকা না দিলে মুনছুর মিয়াসহ ৭ পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হবে বলে জানান শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম। পরে মুনছুর মিয়ার দাবি করা ৫০ হাজার টাকা না দিলে ওই দিন রাত ১১টায় দিকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকিং করে ৭ পরিবারের নাম উল্লেখ করে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়।
ঘোষণার সময় মাইকে বলা হয়, “ওই ৭ পরিবারের সঙ্গে যদি সমাজের কোনো মানুষ ওঠা-বসা করে তাহলে তাদেরও সমাজচ্যুত করা হবে।” মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে ওই ৭ পরিবারের মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ইসমাইল মৌলভির ছেলে মৌকির হোসেন বলেন, “মন্টু মিয়ার সঙ্গে মুনছুর মিয়ার ঝামেলা হইছে। আমরা তাদের গোষ্ঠীগত লোক হওয়ার কারণে অযথা আমাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছে। আমরা ভয়ে কোথাও যেতে পারছি না।”
ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলাম আনন্দ বলেন, “মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে দোকানদাররা আমাদের কাছে কোনোকিছু বিক্রি করছে না। ছোট বাচ্চারা দোকানে গেলেও তাদের কোনো খাবার কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। এখনও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী সমাজের লোকজন আজ (রবিবার) রাতে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করার কথা।”
এ প্রসঙ্গে থানায় অভিযোগকারী ইসমাইল মৌলভি বলেন, “ঘুষের টাকা না দেওয়ায় আমাদের ৭ পরিবারকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সমাজচ্যুত করেছে। তারা মাইকে বলেছে, ৭ পরিবারের মানুষ মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।”
তবে এ ঘটনায় মন্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, “অভিযোগ পেয়ে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উভয়পক্ষ একই এলাকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”