
নব্য রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তরুণ ও প্রবীণদের সমন্বয় ঘটাতে গঠন করতে যাচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদ। যেখানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা স্থান পাবেন। তরুণদের এ রাজনৈতিক দলের উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। যোগাযোগ করছেন দলের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে।
এনসিপিতে যোগদানে আগ্রহের তালিকায় রয়েছেন- সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, এমনকি শ্রমিক নেতা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য যেকোনো দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞরা এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য। অবশ্যই তাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী হতে হবে। এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে। অতীত কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক কোনো ভূমিকা থাকলে তাকে কোনোভাবেই সুযোগ দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দলের প্রয়োজনে আমরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করব। তরুণদের আগ্রহ এবং গতির সঙ্গে আমাদের যারা অগ্রজ ও প্রবীণ আছেন; তাদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতার একটি মিশ্রণ প্রয়োজন। এটির সমন্বয় হলে আমরা মনে করি শুধু দল নয়, দেশের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সেই জায়গা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে তাদের জায়গা থেকে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা আমাদের দলে যুক্ত হতে চান। দলের অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলে (উপদেষ্টা পরিষদ) তারা থাকতে চান। বিভিন্ন সেক্টরে যুগের পর যুগ কাজ করেছেন, সেটা হতে পারে সিভিল সার্ভিস, হতে পারে আইন পেশা, হতে পারে সামরিক বাহিনীর কেউ, হতে পারে ব্যবসায়ী— এমন অভিজ্ঞরা আগ্রহ দেখিয়েছেন। সেখান থেকে চূড়ান্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন করব।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এটির সমন্বয় করবেন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তাজনূভা জাবীন, সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, ড. আতিক মুজাহিদ, অর্পিতা শ্যামা দেব, খালেদ সাইফুল্লাহ, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, মোশফিকুর রহমান জোহান, মীর আরশাদুল হক, মাওলানা সানাউল্লাহ খান, দিলশানা পারুল ও খান মুহাম্মদ মুরসালীন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ওই দিন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রায়েরবাজারে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন শুরু করে এনসিপি। এরপর নিয়মিত তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
ইতোমধ্যে এনসিপি বেশ কয়েকটি উইং চালু করেছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দেশি-বিদেশি উইংয়ের মাধ্যমে কমিটি দিয়েছে। সম্প্রতি দলটির যুব উইংয়ের অধীনে ‘জাতীয় যুবশক্তি’ নামক যুব সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
এনসিপি সূত্র বলছে, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে দলটির তরুণ নেতৃত্বের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। যেহেতু এনসিপির লক্ষ্য গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন, সেহেতু রাজনীতির দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। এজন্য প্রতিটি পদক্ষেপে প্রবীণদের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে দলটি দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে চাচ্ছে। এজন্য একটি সার্চ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেওয়ার জন্য অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের মধ্যে সাবেক শ্রম সচিব মাহফুজুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নাম শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একাধিক নেতা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠন ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল থেকে আসা আগ্রহী ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ধারণ করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী মনোভাব থাকতে হবে। অতীতে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন— এমন ব্যক্তিদের স্বাগত জানানো হবে।
তাদের মন্তব্য, ‘অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে হবে। অতীতে বিতর্কিত কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না— এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে চাই।’
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমলা, শিক্ষক, সাংবাদিক ছাড়াও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটি একাধিক সূত্র। ইতোমধ্যে স্বনামধন্য কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন বলে জানা গেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব শ্রেণির মানুষের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে— বলছেন তারা।
এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে, তারা আমাদের দলে ভিড়ছেন। দেশের জন্য তারা কাজ করতে চান, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন— এমন নাগরিক দেখে আমরা আমাদের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে চাই। সেটা হতে পারে সাবেক সচিব, সাবেক বিশিষ্ট নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কিংবা সিনিয়র আইনজীবী। নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ হতে পারেন। এমনকি সাবেক শ্রমিক নেতৃত্বও হতে পারেন।’
‘তাদের সমন্বয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করব। এখন পর্যন্ত সাবেক সচিব পর্যায়ের কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। বিশিষ্ট নাগরিকও আছেন, সাংবাদিকতা করছেন— এমন মানুষও যোগাযোগ করছেন।’