
শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের সাপমারী গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোররাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে একদল দুর্বৃত্ত কৃষকের স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। শতাধিক ফলন্ত কলা গাছ কেটে নিঃশেষ করে দেয় তারা। হামলা থেকে রেহাই পায়নি দোকানঘরও।
ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারগুলোর একজন আঁখি আক্তার কাঁদতে কাঁদতে জনকণ্ঠকে বলেন, “প্রতিটি গাছে কলা ছিল। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই বিক্রি করে সন্তানের স্কুল ফি, বাজার-সদাই দিতাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল এক রাতে।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসানুর রহমান শাহিন জানান, “এই বাগান করতে আমাদের রাত-দিন কেটেছে। টাকা ধার করে চারা এনেছি, সার দিয়েছি। এখন সব গাছ মাটিতে পড়ে আছে। কলার উপর এমন বর্বরতা, ভাবতেই পারছি না।”
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, একই এলাকার জবেদ আলীর ছেলে হারেজ আলী, হাফিজুর রহমান ও সবুজসহ আরও কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে কলার বাগানে হামলা চালায়।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা একে একে কেটে ফেলে প্রায় শতাধিক গাছ। আহত হয় তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক স্বপ্ন ও স্বস্তি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ টাকা বলে দাবি করেন কৃষকরা।
শুধু কলা গাছেই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা। মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে মুক্তার দোকান ঘরের টিনের বেড়াও কুপিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের ভাষায়, কয়েকদিন আগেই তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারেজ আলীর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। সেই ঘটনাই বড় হয়ে এমন ভয়াবহ রূপ নিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা জনকণ্ঠকে বলছেন, “গাছ কথা বলে না, প্রতিশোধ নেয় না। এই ফলন্ত গাছ গুলোও নিরীহ। কিন্তু এমন নির্মমতা? এটা কোনো মানুষ করতে পারে?”
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক মামলা হয়নি।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার সাব- ইন্সপেক্টর মানিক চন্দ্র দে বলেন, “ঘটনার বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই হামলা যেন শুধু গাছ কাটা নয়, তা যেন মানুষের জীবনের স্বপ্ন কেটে ফেলা, এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী। তারা দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।