বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আবু বকর সিদ্দিক সুমন বলেন, ‘চার বছর ধরে এই পেঁপের চাষ করে আসছি। এই মৌসুমে পেঁপে চাষ করতে আমার সব কিছু মিলিয়ে ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, তবে চার মাস পরই আমি বড় ধরনের সাফল্যের মুখ দেখতে পেরেছি। ২০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে এবারে পেঁপে বিক্রি করে।’
এক সময় অভাব অনটনে থাকা আবু বকর সিদ্দিক সুমন তরুণ বয়সে পাড়ি জমান বিদেশে। আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েসহ ২২টি দেশে চাকরি করেন বিভিন্ন সময়। যে কোম্পানিতে তিনি চাকরি করতেন সেই কোম্পানির কারণেই এসব দেশে চাকরি করতে পেরেছেন। আর শেষ বয়সে দেশে ফিরে গড়েছেন কৃষি খামার, উদ্বুদ্ধ করছেন সাধারণ মানুষকে।
৭৪ বছর বয়সী আবু বকর সিদ্দিক সুমন বলেন, ‘আমি যখন আফ্রিকায় ছিলাম তখন একদিন একটি পাবলিক বাসে উঠেছিলাম। তখন আমার পরই আরেকজন ব্যক্তি ওই বাসে উঠেছিল। তখন কয়েকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে বসার জন্য সিট ছেড়ে দেয়। এরপর বাসের কন্ডাক্টর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়াও পর্যন্ত নেয়নি। এক পর্যায়ে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম ব্যক্তিটি কে, তখন ওই বাসের অন্যান্য যাত্রীরা বলেছিল হি ইজ এ ফার্মার।
‘বিদেশে কৃষকদের কত সম্মান তা নিজের চোখে দেখেছি, কিন্তু আমাদের দেশে কৃষকদের সেই সম্মান নেই। আমি সেই সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বেকার সমাজকে কৃষিকাজে লিপ্ত করতে চাই। কৃষকদের কাছে এখন তো কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না, তবে একটা সময় আসবে কৃষকদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে বাবারা উন্মুখ হয়ে থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকার সময় কৃষি সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাই। এরপর দেশে ফিরে জমি ক্রয় করে কৃষি খামার গড়ে তুলি। প্রথমে দেশি পেঁপের বীজ দিয়ে চাষ শুরু করলেও তাতে কোনো ফল আসেনি। পরে আফ্রিকায় কথা বলে ভারতের বীজ দিয়ে চাষ শুরু করি পেঁপের। এরপরই মূলত সাফল্যের মুখ দেখতে পাই।
‘চার বছর ধরে এই পেঁপের চাষ করে আসছি। এই মৌসুমে পেঁপে চাষ করতে আমার সব কিছু মিলিয়ে ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, তবে চার মাস পরই আমি বড় ধরনের সাফল্যের মুখ দেখতে পেরেছি। ২০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে এবারে পেঁপে বিক্রি করে।’
পেঁপেতে বাজিমাত সুমনের
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিক সুমন। ছবি: নিউজবাংলা
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ‘যে বীজটি আমি চাষ করেছি, সেটার প্রতি কেজির দাম সাড়ে চার লাখ টাকা। এই বীজ দিয়ে আমি চারাও উৎপাদন করি। এক লাখ চারা বিক্রি করলে সেখানে দুই লাখ টাকার বেশি লাভ হয়। এই চারা দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ নিয়ে থাকে। তাছাড়া রাতে এক ঘণ্টা কৃষি উদ্যোক্তাদের পরামর্শও দিই আমি।’
আবু বকর সিদ্দিক সুমন জানান, পেঁপের পাশাপাশি এবার তিনি কুমড়া চাষও করেছেন। কুমড়া চাষেও তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন। ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার কুমড়া চাষে, তবে সব কিছু বাদ দিয়ে তিনি লাভ করেছেন ৩ লাখ টাকা।
সুমনের কৃষি খামার থেকে কুমড়া কিনতে আসা ফেনীর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখান থেকে প্রায় ৫০ মণ কুমড়া নিয়েছি। সুমন ভাইয়ের কৃষি খামারে সবজি কেনা আমাদের জন্য লাভজনক।’
বরিশাল নগরীর নতুন বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুস সালাম রবীন বলেন, ‘ধাপে ধাপে অনেক পেঁপে নিয়েছি। দাম কম পাওয়ায় এখান থেকেই সবজি নিয়েছি। তাছাড়া শুধু পেঁপে নয়, কুমড়া আর লাউও কিনেছি এখান থেকে।’
আবু বকর সিদ্দিক সুমন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেই লক্ষ্যেই মূলত কৃষি খামার গড়ে তোলা। আমার মতে, দেশের মানুষ বিদেশে না গিয়ে দেশেই কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে।’