উপাচার্যকে দেয়া এক চিঠিতে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘থিসিস শুরুর পর থেকে তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক; যেমন- জোর করে হাত চেপে ধরা, শরীরের বিভিন্ন অংশে অতর্কিত ও জোরপূর্বক স্পর্শ করা, অসংগত ও অনুপযুক্ত শব্দের ব্যবহার করেছেন। কেমিক্যাল আনাসহ আরও বিভিন্ন বাহানায় তিনি আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক জাপটে ধরতেন।’
অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সেই সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগটি হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তও শুরু করেছেন নিপীড়ন সেলের সদস্যরা।
এর আগে বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলেন ওই বিভাগেরই এক ছাত্রী।
ওইদিন উপাচার্যকে দেয়া এক চিঠিতে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘থিসিস চলাকালীন আমার সুপারভাইজার কর্তৃক যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হই। থিসিস শুরুর পর থেকে তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক; যেমন- জোর করে হাত চেপে ধরা, শরীরের বিভিন্ন অংশে অতর্কিত ও জোরপূর্বক স্পর্শ করা, অসংগত ও অনুপযুক্ত শব্দের ব্যবহার করেছেন। কেমিক্যাল আনাসহ আরও বিভিন্ন বাহানায় তিনি আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক জাপটে ধরতেন।’
এ অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ, শহীদ মিনার চত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে দফায় দফায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা স্লোগানে দিয়ে শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন।
এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের আইনানুগ বিচার দাবি করছি। আমাদের শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হব, এটা আমরা কখনও আশা করিনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই যথাযথ বিচার হোক। আর তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক।’
এদিকে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্যরা।
সেলের প্রধান অধ্যাপক জরিন আখতার বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কয়েক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছি। উভয় পক্ষের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষককে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদ বলেন, ‘বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক কমিটির সুপারিশের আলোকে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষককে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক সমস্যা নিরসনে সাত দফা দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা।
স্মারকলিপিতে অন্যান্য দাবির সঙ্গে ক্লাসের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর কোনো শিক্ষক যেন তার ব্যক্তিগত কক্ষে কোনো শিক্ষার্থীকে একা ডেকে না পাঠান সে বিষয়টা বিবেচনায় রাখার দাবি জানানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে এভাবে কেন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে আমি জানি না।’