গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে দ্রুতই বিদেশে পাঠানো হবে, সবাই দোয়া করবেন, যাতে তিনি চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে পারেন।
দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি। তারপরও যদি মনে করেন যে, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে, তাহলে ভুল করবেন।
তিনি বলেন, দেশ এখন একটা ভাসমান অবস্থায় আছে। ভারতে বসে শেখ হাসিনা যে কোনো মুহূর্তে সেটার সুযোগ নিতে পারেন। এরই মধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছেন, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছি, নব্য ফ্যাসিবাদ যাতে না আসতে পারে, সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই যুদ্ধকে জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমাদের অনেক বিপদে পড়তে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নতুন সরকার। তারা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে; কিন্তু অনেক জঞ্জাল। এই জঞ্জালকে পরিষ্কার করতে তাদের সময় দিতে হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাব, সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হবে।
সবাইকে ধৈর্য, সহনশীলতা ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন সেই চক্রান্তেরই অংশ। তিনি নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ‘শান্তি ব্রিগেড’ তৈরি করার নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন, সেটাকে অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি, সেটার ওপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা তরুণ-যুবক-ছাত্ররা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে আরও অনেকে… প্রায় হাজারখানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে। ৩-৫ আগস্ট আমাদের ছাত্রদলের অনেক ছেলে প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন ১২৪ জন ছিল। আমি খবর নিয়ে দেখলাম, সেখানে ৯০ জন ছাত্রদলের ছেলে। কিন্তু কখনো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সবাইকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন- নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর সরফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শাম্মী আখতার, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, ওলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ আবুল হোসেন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এ সময় ছাত্রজনতার চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়াও অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে মহানগর,জেলা-উপজেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে গতকাল দোয়া মাহফিল হয়েছে।