মোহাম্মদ শেখ শাহিনুর রহমান প্রেমের ভাষায় লিখেছিলেন “মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ, তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ’ এই পঙ্ক্তি বাস্তব রূপ পেয়েছে বরগুনায় মীর রিজন মাহমুদ নিলয় ও ফৌজিয়া তাসনিম আনিকার জীবনে। আন্দোলনে পরিচয়, এরপর প্রেম এবং অবশেষে শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন এই তরুণ যুগল।
গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরগুনায় জেলায় প্রথম সারিতে অংশ নেওয়া নিলয় (২২) পৌর শহরের আমতলাপাড় এলাকার মরহুম মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। আনিকা (২০) বরগুনা শহরের কলেজরোড এলাকার মনোয়ারুল ইসলাম শামীমের মেয়ে। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজের রসায়ন বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আন্দোলনের মিছিলেই শুরু হয় তাদের সম্পর্কের পথচলা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছেন তারা। দেয় স্বল্প প্রেমের পূর্ণতা।
“স্বল্প প্রেমের ইতি টেনে দুজনে আবদ্ধ হওয়ার গল্পে ফৌজিয়া তাসনিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন ‘প্রথম কথা হচ্ছে সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার থেকে আসে। বাসা থেকে আন্দোলনে যাওয়ার অনুমতি না থাকায় সেখানে আমার যাওয়ারই কথা ছিল না। আমি পালিয়ে গিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। তার সঙ্গে পরিচয় আন্দোলনে। আমি মেয়েদের মধ্যে থেকে স্লোগান দিতাম, সেজন্যে সে আমাকে ৪ আগস্ট নক দেয় যে ওইদিন প্রোগ্রামে কী করা হবে। আমি জানাই যে আমরা রেডি তোমরা মিছিল নামাও। এরপর নিলয়ের বাসায় হামলা হয়। নিলয়ের প্রতি দুর্বলতা হচ্ছে তার সাহসিকতা এবং সততা। কারণ তার পরিবারের অনেকেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবুও সে আন্দোলনে প্রথম সারিতে ভূমিকা পালন করে গেছে। এ থেকেই তাকে আমার ভালো লাগতো। এরপর ৫ আগস্ট মিছিলে অনেক মানুষের ভিড়ে আমি পড়ে যাচ্ছিলাম, তখন সে আমার হাত ধরে। সেই থেকেই আমরা একসঙ্গে আছি।’
রাজপথ থেকে ভালোলাগা, প্রেম ও বিয়ের বিষয়ে মীর রিজন মাহমুদ নিলয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আন্দোলনে অনেককেই দেখেছি, ও অন্যরকম ছিল। স্লোগান দিত, কবিতা আবৃত্তি করতো। আন্দোলন চলাকালীন একদিন আমার সামনে এলো এবং মাইকটা চাইলো। বললো আমি এখন কবিতা পাঠ করবো। আমি ওইদিন ওকে চিনলাম। এরপর আন্দোলনের সময় আমাদের সবারই একটা ফেসবুক গ্রুপে কথা হতো। সেখানে ও সবাইকে সাহস জোগাতো। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলের পরে আমি সিদ্ধান্ত নিই, ওকে জানাই এবং বিয়ে করার কথা বলি। এরপর আমরা পরিবারকে জানাই, তারাও রাজি হয়ে যায়।’
দেশের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ভালো কাজে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। দেশের কাছে আমার চাওয়া, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন সবার জানা, তেমনি এই ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসও যেন মানুষ মনে রাখে।’