বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের অনুপ্রেরণায়, অনুপ্রাণিত হয়েছে পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ।পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কিছু ভিডিও-ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে পাকিস্তানিদের বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিল, এমনকি বাংলা গানও গাইতে শোনা গেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ পাকিস্তানে বইতে শুরু করেছে। সে দেশের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রেরণা জোগাচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্রদের সাহস ও আত্মত্যাগ। ছাত্র-জনতার ভয়ে শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন; সেভাবে পাকিস্তানের সরকারেরও পালানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এ পরিস্থিতিতে বিজয় ও সাহসের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন অনেক পাকিস্তানি। অনেকে বাংলাদেশের ছাত্র শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, হাসিনা সরকারের দ্বারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেমন নির্যাতিত হয়েছে তেমনি তাদের সরকারের হাতে পাকিস্তানিরাও নির্যাতিত হচ্ছেন। বর্তমান পাকিস্তানিদের আন্দোলন ক্ষমতাবানদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধেই।
নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি ঘোষণার এ নীতি বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনেও দেখা গেছে। বিক্ষোভে অনেক ছাত্র-জনতা ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেছেন। এমনকি ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলের পর বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি সেখানে কেউ কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছেন।
এদিকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। ওই মিছিলেও বাংলাদেশের পতাকা হাতে অংশ নেন অনেক পাকিস্তানি। সে সঙ্গে পথে-ঘাটে মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ মানুষ।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মিষ্টি বিতরণ করছেন কয়েকজন পাকিস্তানি। একটি গাড়ি থেকে যাত্রী কীসের মিষ্টি জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে বিতরণকারী বলেন, হাসিনা পালিয়েছে। এতে উভয়ই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং যাত্রী প্যাকেট থেকে মিষ্টি তুলে নেন।
অপর এক ভিডিওতে বাংলা গান গেয়ে বিক্ষোভকারীদের উজ্জীবিত করতে দেখা গেছে। ওই বিক্ষোভেও বাংলাদেশের পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছিল। এ ছাড়া ‘তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানও শোনা গেছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহে মূলত বেলুচিস্তানে বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়। এর আগে আন্দোলনটি বেলুচিস্তান প্রদেশে চীন-সমর্থিত বিমানবন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছিল।
কিন্তু ক্রমশ তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। বর্তমানে বেলুচিস্তান স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে আসার খবরেও সেখানে অনুপ্রেরণা ছড়াচ্ছে। গত সোমবার (১৯ আগস্ট) পাকিস্তানের কোয়েটায় গুম হওয়া বেলুচ নেতাদের সন্ধানের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা।
পৃথকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরাও নতুন করে মাঠে নেমেছেন। তারা ইমরান খানের মুক্তি এবং সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে শক্তি দেখানোর পরিকল্পনা করছেন। এ আন্দোলনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ছাত্র সংগঠন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দলটির আন্দোলনের প্রচারেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গণভবনের মতো পরিস্থিতি শিগগির পাকিস্তানে হতে যাচ্ছে।