পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি,নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলাকে বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।এই পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার এবং ক্ষতি গ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিশিষ্ট জনেরা।৬ ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফেনীতে ‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা এই দাবি জানান।ফেনীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ফেনীর নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসী’।দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ,নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি,সাংবাদিক,ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।কর্মসূচিতে সভাপত্বি করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড.আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। কর্মসূচি থেকে ১১ দফা ফেনী ঘোষণা’ তুলে ধরেন দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ শাহাদাত হোসাইন।আয়োজক প্লাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসীর অন্যতম উদ্যোক্তা বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় স্ট্রাইক কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ এজাজ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাপা যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন,বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ,নারী নেত্রী নুর তানজিলা রহমান,ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম,দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফ রিজভী,ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এমদাদ হোসাইন,কবি ও সমাজকর্মী ফজলুল হক,সমাজকর্মী আমের মক্কি,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনী জেলার সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ইমাম হোসেন,কবি ও সমাজকর্মী আলাউদ্দিন আদর।অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এসে এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা ফেনীবাসী প্লাটফর্মে অন্যতম উদ্যোক্তা কেফায়েত শাকিল।অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আরেক উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ হাসান।অধ্যাপক ড.আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন,এই বন্যা শুধুই প্রাকৃতিক নয়,ভারত কোনো ভাবে এর দায় এড়াতে পারে না।এই বন্যায় ফেনীসহ ১১টি জেলার মানুষ মানসিক,শারীরিক ও আর্থিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।একইসঙ্গে সকল অভিন্ন নদীতে ড্যাম বা বাঁধ অপসারণের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ।মোহাম্মদ এজাজ বলেন,ভারত চাইলেই যে এক দিনে বাঁধ কেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলে দিতে পারে, এবারের বন্যা তার উদাহরণ।তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ৬৮টি বাঁধ দিয়েছে ভারত।প্রতিটির হিসাব ভারতকে দিতে হবে।এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন,ভারত দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফাঁরাক্কায় বাঁধ দিতে পারেনি।শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত এই বাঁধ দিতে সক্ষম হয়।ফেনী নদীর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে।এই দেশে দিল্লির আধিপত্যবাদের প্রোডাক্ট ছিল শেখ হাসিনা। দেশে উন্নয়নের বয়ান হাসিনার ছিল না,এটি ছিল মোদির শেখানো বুলি।উন্নয়নের নামে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করেছে শেখ হাসিনা।মিহির বিশ্বাস বলেন,ফেনীর মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে জানে।ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও ফেনীবাসী হারবে না।ভারতকে পানি নিয়ে বৈষম্যহীন আচরণের আহ্বান জানান তিনি।হুমায়ুন কবির সুমন বলেন,দেশের এবারের বন্যা যতোটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার দাবি করেন তিনি।সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ বলেন,ভারত শুধু পানিসন্ত্রাস নয়,সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা,এই দেশের ভোটাধিকার হরণ ও বাণিজ্য আগ্রাসন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। আচরণ না পাল্টালে ভারতকে এর মূল্য দিতে হবে।