মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গোলাম রসুল নামে এক বৃদ্ধের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে ১০ লাখ টাকা জরিমান, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. তোহিদুল ইসলাম এ রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত গোলাম রসুল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামের দুর্লভ মণ্ডলের ছেলে।
মামলাটির অভিযোগের বিবরণী থেকে জানা যায়, গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামের গোলাম রসুলের প্রতিবেশী বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি ও মানসিক প্রতিবন্ধী এক মেয়ের ড়িতে প্রায় যাতায়াত করতো। মাঝেমধ্যে গোলাম রসুল তার জমিতে কচু, মরিচ এবং ঘাস তোলার জন্য ওই মেয়েকে নিয়ে যেত। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর গোলাম রসুল প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে মাঠে যায়। এর প্রায় এক মাস পর ওই প্রতিবন্ধী বমি করতে থাকেন। এ ঘটনায় ওই মেয়ের মায়ের সন্দেহ হলে প্রতিবন্ধী মেয়ের আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে সাক্ষীদের সামনে গোলাম রসুলের বাড়ি গিয়ে তাকে দেখিয়ে দেন। পরে গোলাম রসুলের ভাই জহুরুল ও তার স্ত্রী ডালিয়াকে ঘটনা বিষয়ে বলেন। পরে ভিকটিমকে নিয়ে বাউট স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে পরীক্ষা করান। এতে জানা যায় ওই প্রতিবন্ধী মেয়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গোলাম রসুলের ভাই জহুরুল তাদেরকে টাকার লোভ দেখান এবং গর্বের সন্তান নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেন।
গ্রাম্য ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে অনিহা প্রকাশ করলে ধর্ষিত প্রতিবন্ধীর মা মামলা দায়ের করেন এবং গর্ভজাত সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করান। ডিএনএ পরীক্ষায় আসামি গোলাম রসুল ভিকটিমের গর্ভজাত পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা হিসাবে প্রমাণিত হয়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় মোট ৮ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দেন। এতে আসামি গোলাম রসুল দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) এ ধারায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই সাথে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ১৫ ধারা বিধান অনুযায়ী আসামি গোলাম রসুলের প্রতি আরোপিত অর্থদণ্ড ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য হবে। উক্ত ক্ষতিপূরণের টাকা আসামি গোলাম রসুলের বর্তমান সম্পদ হতে আদায় করা সম্ভব না হলে তিনি ভবিষ্যতে যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হবেন সে সম্পদ হতে আদায়যোগ্য হবে এবং এক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের ওপর অন্যান্য দাবি অপেক্ষা ক্ষতিপূরণের দাবি প্রাধান্য পাবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১৬ ধারার বিধান অনুযায়ী কালেক্টরেট, মেহেরপুরকে গোলাম রসুলের স্থাবর বা অস্থাবর বা উভয় প্রকার সম্পদ নিলামে বিক্রি করে সেসব অর্থ এই ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
ক্ষতিপূরণের অর্থ এই ট্রাইবুনালে জমা দেওয়া সাপেক্ষে তা ভিকটিমকে প্রদান করা হবে।
ঐতিহাসিক রায়ে উল্লেখ করা হয়, ডিএনএ পরীক্ষায় আসামি গোলাম রসুল ভিকটিমের গর্ভজাত পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা হিসাবে প্রমাণিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১০ এর ১৩ (১) (খ) ধারার বিধান অনুযায়ী ভিকটিমের গর্ভজাত পুত্র সন্তান গোলাম রসুলের পরিচয় পরিচিতি হবেন।
উক্ত আইনের ১৩(১)(গ),১৩(২) ও ১৩(৩) ধারার বিধান অনুযায়ী ভিকটিমের গর্ভজাত পুত্র সন্তানের ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার আসামি গোলাম রসুলের নিকট থেকে আদায় করতে পারবে এবং তার বিদ্যমান সম্পদ হতে উক্ত অর্থ আদায় করতে আদায় করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক হবেন সে সম্পদ থেকে আদায়যোগ্য হবে।
মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে পিপি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী কৌশলী ছিলেন।