বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর থেকে শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অগণিত। তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে জামালপুরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরছেন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা।
৫ দিন ধরে সারা দেশের ন্যায় পুরো জামালপুর জেলা জুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা জেলার বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আকতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে উপজেলার মেলান্দহ সরকারি কলেজ, শহীদ মিনার, থানা চত্বর, সিএনজি স্টেশনসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেছে দেয়াল লিখনে।
কেউ নোংরা দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। এরপর প্রতিবাদী বিভিন্ন বাক্য লেখা হয়। শিক্ষার্থীদের জমানো টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে রং, তুলি, ব্রাশসহ দেয়াল লিখনের নানা উপকরণ। জেলার বিভিন্ন দেয়াল চলছে কোটা আন্দোলনের দ্রোহ ও প্রতিবাদের চিত্র।
এতে অভিনব সাঁজে সেঁজেছে জামালপুরের মেলান্দহ।
এসব গ্রাফিতিতে ফুটে ওঠেছে দেশপ্রেম, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও প্রতিবাদের বলিষ্ঠ আওয়াজ।
শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতিতে বুঝানো হচ্ছে, কোনো জুলুমবাজ শাসককে তারা মেনে নেয় না। অনিয়ম আর পরাধীনতার বিরুদ্ধে তাদের আমৃত্যু অবস্থান। সমতা আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সবাই একসঙ্গে থাকতে চায়।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগান ও আলপনা করা হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্লোগান ধ্বনিত এসব প্রতিবাদী সব বাক্য নজর কাড়ছে পথচারীদের।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের আশরাফুন্নাহার স্নিগ্ধা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দেয়াল লিখন ও চিত্রাঙ্কন বিষয়ে বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ও শহীদ ভাইদের স্মৃতিচারণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দেয়ালে চিত্রাঙ্কন। আমরা এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বার্তা প্রেরণ করতে চাই। নতুন বাংলাদেশ এসব প্রতিবাদী স্লোগান দেয়ালে দেয়ালে শোভা যাচ্ছে।
এছাড়া ফাহিম, পার্থ, আসিফ, সাদিক, সেজান অনিসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে গ্রাফিতির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের নিজেদের টাকা দিয়ে আমরা রং, তুলি, ব্রাশ কিনে দেয়াল লিখনের কাজ শুরু করেছি। আমাদের এ কাজে বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করছে। প্রায় সারাদিনই আমরা সবাই দেয়ালে গ্রাফিতির চিত্র অঙ্কনের কাজ করছি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে থাকা প্রীতম, মাহিম, মৃত্তিকা, ইতি নামের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের মেধার বিজয় হয়েছে। আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আবারও প্রমাণ করেছি ছাত্ররা এ দেশের প্রধান প্রাণ শক্তি। ছাত্ররা পারে একটি দেশকে গড়তে। তাই আমাদের শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে তাদের প্রতিবাদী ভাষ্য লিখে তরুণ প্রজন্ম জানাচ্ছে বাংলাদেশ আমার, চল নতুন করে আবার বাংলাদেশ গড়ি।