গাজীপুরের ০৮ টি উপজেলার মধ্যে ০৫ টি উপজেলার মাঠজুড়ে শুধু সবুজ সোনালী ধানের ক্ষেত। যে দিকেই তাকাই শুধু দেখা যায় সবুজের সমারোহ। ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাঁদরে ঢাকা। চারিদিকে যেন এক অপরূপ দৃশ্য। রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়েছে কৃষি খামারের চারিদিকে। মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা আর কৃষকের মন। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার থমকে দাঁড়ায় পথিক। কিছু কিছু জমিতে শুরু হয়েছে সোনালী ধানের শীষ কেটে মারাই করে ভরে উঠছে কৃষকের শূন্য গোলা। আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।
গাজীপুরের পাঁচটি উপজেলায় ৪২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। জেলা কৃষি অফিস বলছে, চলতি বছর ২,৪৭,৫১৬ টন রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিস জানায়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৮ শত ২৫ হেক্টর, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৪ হাজার ৬ শত ২২ হেক্টর, শ্রীপুরে ১০ হাজার ১শত ৬০ হেক্টর, কাপাসিয়ায় ১১ হাজার ৬ শত ৩৫ হেক্টর ও গাজীপুর সদরে ১০ হাজার ৬শত ১৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে।
গাজীপুরের সদর উপজেলার কৃষক সামসুর রহমান বলেন, ‘৪ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি বাজারমূল্য ভালো পাব।’
কালিয়াকৈর উপজেলার আরেক কৃষক জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘চাষাবাদের খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। তারপরও এ বছর ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ প্রতি বিঘাতে ১৭\১৮ মন ধান পাব। ফলন ভালো না হলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গাজীপুর জেলার উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘রোপা আমন’ চাষের জন্য এ বছর গাজীপুর জেলায় প্রায় ৪ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে উন্নতমানের বীজ ও সার কীটনাশকের সুবিধা দিয়েছি আমরা। এছাড়া ১ হাজার কৃষককে উচ্চফলনশীল ধান-ই-গোল্ড উফসী জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে।’
গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া, মনিপুর ও বাড়িয়ায়, কালীগঞ্জ উপজেলার বড়াইদ, জামালপুর, মোক্তারপুর, বাহাদুরসাদী দেখা গেছে, কৃষকরা এখন রোপা আমন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বডগাঁও গ্রামের সারফুউদ্দিন কৃষক বলেন অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক ভাল হয়েছে।
তবে কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার ফলে চাষিরা ক্ষতির ভয়ে আবাদের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন বলেও জানালেন কেউ কেউ। আবার শিল্প এলাকার কৃষকরা কারখানার বর্জ্যের কারণেও রোপা আমন আবাদ করেননি অনেকেই।
এ বছর ধান ব্রি-৪৯ ও ব্রি-৮৭, হাইব্রিড- ৪ এবং ৬ জাতের বীজ কৃষকদের বিতরণ করা হয়েছে।